Home » ধর্ম নিরপেক্ষতা একটি কুফুরি মতবাদ 

ধর্ম নিরপেক্ষতা একটি কুফুরি মতবাদ 

by inthenameofallah
ধর্ম নিরপেক্ষতা

ইসলাম আল্লাহর নিকট মনোনীত একটি দ্বীন (পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা)। মানবা জীবনের সকল বিভাগের জন্য এর রয়েছে কল্যাণকর বিধান। আল্লাহতায়ালাই ভালভাবে জানেন কিভাবে, কোন বিধানের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির কল্যাণ, শৃংখলা ও সমৃদ্ধি আসবে। তাই তিনি মানবতার সার্বিক কল্যাণে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আবশ্যক এমন সকল বিধানের সমন্বয়ে ইসলামকে সমৃদ্ধ করেছেন।

এজন্য ইসলামের যত নবী ও রাসূল পৃথিবীতে এসেছেন তাদের কাউকেই দৈনন্দিন জীবন ও রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে কারো নিকট নীতি বিধানের জন্য যেতে হয় নাই। বরং তাদের সকলেই আল্লাহ প্রদত্ত বিধান অনুসরন করে অত্যন্ত দক্ষতার সহিত সুন্দরভাবে কল্যাণকর রাষ্ট্র ব্যবস্থা উপহার দিয়ে গেছেন। যা ছিল পরবর্তী সকলের জন্য অনুসরনীয় ও অনুকরনীয়। সে মোতাবেক ইসলামের বিশ্বাসী সকলকেই এ পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা মেনে চলা যেমনি আবশ্যক তেমনি দু’মতে বিশ্বাসী হয়ে চলা ইসলাম বিরোধী। ইসলামের কিছু অংশ বিশ্বাস করবো, আবার কিছু অংশ ত্যাগ করবো এবং সুবিধা মতো নিরপেক্ষ থাকবো, সুবিধা মতো গ্রহণ কবো, তা কখনো হতে পারে না। বরং ইহা ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ। কুরআনের ভাষায় এ ধরনের অবস্থানকে কুফুরি বলা হয়েছে।

ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ বর্তমান বিশ্বের একটি দার্শনিক মতবাদ হিসেবে পরিচিত। ইংরেজীতে একে বলা হয় Secularism যা Saeculum মূল থেকে গৃহীত। ইহা মূলতঃ বস্তুগত বিষয় সমূহকে ইঙ্গিত করার জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু কালের প্রবাহমানতায় শব্দটি শ্বাশত বিষয় (Eternity) এর বিপরীত অর্থে ব্যবহৃত হয়। Secularism বা ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ শব্দের দুটি অর্থ পাওয়া যায়। যথা-

1-Secularism assart freedom of religion. অর্থাৎ- যে মতবাদ সকল ধর্মের স্বাধীনতাকে পূর্ণভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে তাকে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ বলে। এ মতাবাদের আওতায় একটি দেশ সমস্ত ধর্ম বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সকল অধিকার প্রদান করে থাকে। কোন একটি বিশেষ ধর্মকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয় না।

2-Secularism refers to belief that human activities decisions should be besed on evidence and fact not related with any religious or spiritoul affairs. অর্থাৎ মানুষের কর্মতৎপরতা এবং সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়িত হবে বাস্তব ও প্রমানিত বিষয় দ্বারা, মানুষের অধিনগত কোন ধারনা দ্বারা নয়। এ অর্থে Secularism এর প্রতিশব্দ দাড়ায় That is related to worldly qualities অর্থাৎ যা কোন পার্থিব গুনাগুনের সাথে সম্পর্কিত। বিখ্যাত Random house Dictionary of language গ্রন্থে Secularsim ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ শব্দের ৩টি পরিচয় পাওয়া যায়। যথা-

1-Not regard as relious or spiritialy sacred- যা ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক বলে বিবেচিত নয়।
2-Not partaning to or connected with any religion যা কোন ধর্মের সাথে সম্পর্কিত নয়।
3-Not belonging to a religious- যা কোন ধর্মবিশ্বাসের অন্তর্গত নয়।

পরিভাষায় Oxford dictionary তে বলা হয়: Secularism means the doctrine morality should be based solely on regard to the wellbeing of mankind in the present life to exclusion of all considarations drawn from belif in god or in future state. অর্থাৎ ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ হচ্ছে এমন এক মতবাদ যা মনে করে আল্লাহর উপর বিশ্বাস বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস নির্ভর করবে সমস্ত বিবেচনা থেকে মুক্ত থেকে। মানব জাতির বর্তমান কল্যাণ চিন্তার উপর ভিত্তি করে নৈতিকতা গড়ে উঠে।

Online প্রদত্ত Wikipedia এর সংজ্ঞাঃ -eligious skepticism or indifference. 2-The view that religious consideration should be excluded from civil affairs or public educations.

তবে Secularism শব্দটি ১৮৪৬ সালে সর্বপ্রথম পারিভাষিক রূপ দিয়েছেন ইংরেজ সমাজ সংস্কারক George Jocob Holyoak। তার বর্ননা মতেঃ Secularism is a form of opinion which concerns itself only with questions the issuse of which can be tested by the experience of this life. এ সংজ্ঞার আলোকে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ বলতে এমন সব বিষয়কে বলা হয়েছে যা কেবল পার্থিব জীবনের অভিজ্ঞতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পরকাল বা অতিন্দ্রিীয়বাদ বলতে সব কিছুকে অস্বীকার করা হয়েছে। অর্থাৎ- এখানে পূর্ণভাবে Absense Religion -তথা ধর্মের অনুপুস্থিতি বিদ্যমান। ধর্ম নিরপেক্ষ
মতবাদীরা মানুষকে ধোকা দিয়ে বোকা বানানোর জন্য বলে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বাস্তবে বিষয়টি এর সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থই হলো ধর্মহীনতা।

এছাড়া এন সাইক্লোপেডিয়া সহ অন্যান্য বিখ্যাত Dictionary গুলোতে Secularism বা ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ এর অর্থ করা হয়েছেঃ

1-Secular sprit or tendency especially of political on social philosophy that rejects all forms religious faith. অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ হচ্ছে সেই রাজনৈতিক দর্শন যা সকল ধর্ম বিশ্বাসকেই প্রত্যাখ্যান করে।
Rejects all forms of religious faith.
2-The view that public education and other matters of civil should be conducted without the introduction of a religious element. সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার একমাত্র অর্থ ধর্মহীনতা, ধর্মদ্রোহিতা ও কোন ধর্মের অন্তর্গত না থাকা। এছাড়া সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার অন্য কোন অর্থ সম্বলিত কোন ব্যাখ্যা দিতে পারে না। সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ এমন এক বিষাক্ত মতবাদ যা আল্লাহ প্রদত্ত নয়। বরং সম্পূর্ণ মানব রচিত ধর্মহীন, ধর্মদ্রোহী মতবাদ। আর রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে Secularism বা ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ হলোঃ Secularism is a movement towards the seperation of religion and state. অর্থাৎ- রাষ্ট্র এবং ধর্মকে পৃথক করার যে আন্দোলন তাই ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ।

ক্রমবিকাশ: ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ পশ্চিমা বিশ্বে অষ্টাদশ শতাব্দিতে গড়ে উঠেছিলো এবং তা সৃষ্টি হয়েছিলো মূলতঃ মানবতাবাদের ধারনাকে ভিত্তি করে। বলা হয়েছিল Human Bondage তথা মানবতাকে শৃংখলাবদ্ধ করতে সবচেয়ে বড় সহায়ক। ইউরোপীয় চার্চ (Institution of religion) এবং চার্চ কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া ধর্মবিশ্বাস। এমনকি মানুষেরা ঐ সময় ধর্মের বাইরে দাঁড়িয়ে মহা বিশ্বকে বুঝাবার চেষ্টা শুরু করে দিল। তারা নিজের মতো করে তাদের জীবনকে বুঝার চেষ্টা করতে লাগলো। এমনকি অত্যন্ত কৌশলভাবে মানুষের মাঝে এ ব্যাখ্যা করা হতে লাগলো যে মানব জীবন কোন এক অনির্দিষ্ট ঘটনায় সৃষ্টি হয়েছে। তা প্রতিপালিত হয় নিজের পরিচর্যায় এবং God বলে কেউ থাকলে তা সে নিজেই।

এভাবে ক্রমান্নয়ে এ Secularism এর প্রতিভাস বা অভ্যুদয় খৃষ্টান ধর্মের প্রতিষ্ঠানিক শক্তিকে বিদায় করার বা হ্রাস করা শুরু করলো এবং এ প্রক্রিয়া যখন একটি মোটামুটি Fuller shape এ রূপ ধারন করলো তখন পশ্চিমা বিশ্বের অনেকে মনে করলো মানুষের History of saluation বা মুক্তির ইতিহাস সুচিত হলো। ধর্ম ভিত্তিক জীবন এতোটা হ্রাস পেলো যে ধর্মকে ঠাই করে নিতে হবে তা কেবল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যেয়ে। বুদ্ধি ভিত্তিক জীবন এবং সামাজিক জীবনে এর প্রভাব পড়লো ব্যাপক ভাবে। ছড়িয়ে পড়লো দ্রুত বেগে ইউরোপ আমেরিকা এবং এশিয়া জুড়ে এ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। Democracy বা গণতন্ত্র নামক রাষ্ট্রীয় মতবাদের সাথে মিশে মিশে একটি সামন্ত্রিক রূপ লাভ করলো।

বিংশ শতাব্দি ধরে তা বিকাশ লাভ করতে করতে বিংশ শতাব্দিতে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ পূর্নরূপে বিকাশ লাভ করলো এমনকি রাশিয়ার জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্র যে বিপ্লব এনে সমাজতন্ত্রকে রাজনৈতিক রূপলাভ করালো সেখানেও Secularism বা ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয় আরো জোরালো ভাবে। এভাবেই এশিয়া উপমহাদেশের ভারত হয়ে দাদাবাবুদের পদলেহনকারী আওয়ামীলীগের ঘাড়ে চেপে বসে এ ঘৃণিত Secularism বা ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ।

ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের বৈশিষ্টসমূহ (Principles of Secularism)

১. ধর্ম এবং রাষ্ট্র সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে যাবে। অর্থাৎ- রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামিক শরিয়া Ten commandments বেদ-বৈদান্ত, খৃষ্টতন্ত্র কোন কিছুরই উপস্থিতি থাকবেনা।
২. রাজনীতিবিদরা ধর্মীয় ব্যাখ্যার পরিবর্তে সাধারণ যুক্তিগ্রাহ্য নীতিকেই লালন করবে তাদের সিদ্ধান্ত তৈরীর ক্ষেত্রে।
৩. সামাজিক আচরনে মানুষ পৃথিবীকে বোঝার চেষ্টা করবে এবং উপভোগ করবে ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের বাইরে গিয়ে Science, reason এবং Naturalistic thanking সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অনুঘটক হিসাবে কাজ করবে।
৪. ব্যক্তিগত ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসী হলে ধর্ম তার কাছে ঐচ্ছিক হয়ে পড়ে। সে ধর্মকে লালন করলে তা নিজের মধ্যে ধারন করবে। আর লালন না করলে তা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
৫. পার্থিব জীবনটি কেবল মাত্র বস্তুগত উপায়ে উন্মেষ ঘটবে এবং পরিচালিত হবে।
৬. বিজ্ঞান হবে মানুষের অস্তিত্বমান প্রভু।
৭. ভালোমন্দের মাপাকাঠি হবে তাৎক্ষনিক কর্মের উপর। পরকাল বা ভবিষ্যত কোন কিছুর আলোকে নয়। বর্তমান জীবনে যেটি ভালো সেটিই কেবল ভালো।
৮. জীবন পরিচালনায় ধর্মের Referene এবং Commandments একাত২ অপ্রাসঙ্গিক।
৯. স্রষ্টা বা প্রতিপালকের মানুষের জীবন পরিচালনায় কোন অংশগ্রহন নেই বলে মনে করা হয়।
১০. Free thought এবং Free expression এখানে চূড়ান্ত ভাবে বৈধ। বর্ণিত ১০ (দশটি) বৈশিষ্ট্য বা ধারা পর্যালোচনা করলে একথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যায় যে, Secularism বা ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ এর জন্মই হয়েছে বিশ্বমানবতাকে ধর্মহীন করার জন্যে। তাই সকল উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে দ্বিধাহীন চিত্তে একমত যে Secularism বা ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ একটি কুফরি মতবাদ। তবে সবচেয়ে আশ্বর্যের বিষয় হলো এ ধর্মদ্রোহীরা তাদের সপক্ষে কুরআনুল কারীমের কতিপয় আয়াতকে অপব্যাখ্যা করে ব্যবহার করার ঘৃণিত দুঃসাহস দেখাচ্ছেন।

ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের মধ্যে পার্থক্য:
১. ইসলাম আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত দ্বীন (অর্থাৎ- পরিপূর্ণ জীবন বিধান)। আর ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ ধর্মকে অস্বীকারকারী মানুষের সৃষ্ট।
২. ইসলাম ধর্মের প্রচার করা ফরয। আর ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ প্রচার করা হারাম।
৩. ইসলাম ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করে দেখার কোন সুযোগ নাই। আর ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদে ধর্ম ও রাজনীতি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।
৪. ইসলাম মানবতাকে দুনিয়ার শান্তি এবং পরকালীন মুক্তির প্রতি আহবান করে। আর ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ শুধু দুনিয়ারী ধারনা দিতে পারে।
৫. ইসলাম মুসলমানদের আদর্শ। আর ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ ইসলামের দুশমনদের আদর্শ।
৬. ইসলাম মানুষদেরকে উত্তম চরিত্র শিক্ষা দেয়। আর ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ তা করে না।
৭. ইসলামের অনুসারীদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে জান্নাত লাভ। আর ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের পরিনতি হলো শয়তানের সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে জাহান্নাম।
৮. ইসলাম ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আর ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ ধর্মহীন রাজনীতিতে বিশ্বাসী।
৯. ইসলাম মানুষকে এক আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করায়। আর ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ তা করে না।
১০. ইসলাম মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা প্রদানে বদ্ধপরিকর। আর ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ এ ব্যাপারে চরমভাবে ব্যর্থ।
১১. ইসলাম জাতি, ধর্ম, গোত্র, বর্ণ সকলের কল্যাণ কামনা করে। আর ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ তা করে না।

অধ্যক্ষ মুহাম্মদ যাইনুল আবেদীন