Table of Contents
এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের ৬ টি হক –
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের হক ছয়টি। অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাবে, মারা গেলে তার জানাযায় হাজির হবে, তাকে ডাক দিলে সে সাড়া দিবে, যখন সাক্ষাৎ হবে তখন তাকে সালাম করবে, হাঁচি দিলে তার জবাবে দু’আ করবে এবং উপস্থিত-অনুপস্থিত সকল সময় তার কল্যাণ কামনা করবে।
মুসলমানের হক সম্পর্কিত হাদিস
রাসূল (স:) অন্য একটি হাদিসে বলেন, فُكُّوا الْعَانِيَ ـ يَعْنِي الأَسِيرَ ـ وَأَطْعِمُوا الْجَائِعَ وَعُودُوا الْمَرِيضَ
অর্থাৎ তেমরা বন্দীকে মুক্ত কর, ক্ষুধার্তকে আহার দান কর এবং রোগীর সেবা-শুশ্রুষা কর। (সহীহ বুখারী, ইফা: ২৮৩২)
রোগীকে দেখতে যাওয়া, তার সেবা করাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা স্বয়ং নিজের সেবার সাথে তুলনা করেছেন। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে কুদসীতে এসেছে যে, রোগীর সেবা করার মাঝেই আল্লাহর সেবা, কোন অনাহারীকে আহার করানোর মাঝেই আল্লাহকে খাওয়ানো ও তৃষ্ণার্ত ব্যক্তিকে পানি করানোর মাঝেই আল্লাহকে পান করানোর সমান। অর্থাৎ সৃষ্টির সেবার মাঝেই স্রষ্টার সন্তষ্টি রয়েছে।
মুমিনের হক নিয়ে হাদিস
রাসূল স: বলেছেন:
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَا ابْنَ آدَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِي . قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَعُودُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ . قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِي فُلاَنًا مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِي عِنْدَهُ يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمْنِي . قَالَ يَا رَبِّ وَكَيْفَ أُطْعِمُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ . قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّهُ اسْتَطْعَمَكَ عَبْدِي فُلاَنٌ فَلَمْ تُطْعِمْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ أَطْعَمْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَسْقَيْتُكَ فَلَمْ تَسْقِنِي . قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَسْقِيكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ قَالَ اسْتَسْقَاكَ عَبْدِي فُلاَنٌ فَلَمْ تَسْقِهِ أَمَا إِنَّكَ لَوْ سَقَيْتَهُ وَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي
অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিনে বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমার খোজ-খবর রাখনি। সে বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি কী করে তোমার খোজ-খবর করব, অথচ তুমি সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, আর তুমি তার সেবা করনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি তার সেবা-শুশ্রুষা করলে তার কাছেই আমাকে পেতে।
হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে পানীয় চেয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। সে (বান্দা) বলবে, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমি কী করে তোমাকে পান করাব, অথচ তুমি সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানীয় চেয়েছিল, তুমি তাকে পান করাওনি। যদি তুমি তাকে পান করাতে, তবে তা আমার কাছে পেতে। কবি আবদুল কাদির তার “মানুষের সেবা” কবিতায় অত্যন্ত চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন।
সুতরাং প্রতিটি মুসলিমের উচিৎ রোগে শোকে অন্য মুসলিমের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া, তার খোজ খবর নেয়া, তাকে আর্থিক ও শারিরীকভাবে সহযোগিতা করা এবং তার সুস্থতার জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করা।
জানাযায় অংশগ্রহণ ঈমানের অঙ্গ :
وَيَشْهَدُهُ إِذَا مَاتَ
অর্থাৎ যখন মুমিন মারা যাবে তার জানাযায় শরীক হওয়া। কোন মুমিনের জানাযায় অংশগ্রহণ করা শুধুমাত্র নৈতিক দায়িত্ব নয় বরং তা ঈমানের অংঙ্গও বটে অন্য একটি হাদিসে বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
قَالَ أَمَرَنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِسَبْعٍ، وَنَهَانَا عَنْ سَبْعٍ. فَذَكَرَ عِيَادَةَ الْمَرِيضِ، وَاتِّبَاعَ الْجَنَائِزِ، وَتَشْمِيتَ الْعَاطِسِ، وَرَدَّ السَّلاَمِ، وَنَصْرَ الْمَظْلُومِ، وَإِجَابَةَ الدَّاعِي، وَإِبْرَارَ الْمُقْسِمِ.
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন এবং সাতটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। তারপর তিনি উল্লেখ করেলেন, পীড়িতের খোঁজখবর নেওয়া, জানাযার অনুসরণ করা, হাঁচির জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ্ বলা, সালামের জওয়াব দেওয়া, মাজলুমকে সাহায্য করা, আহবানকারীর প্রতি সাড়া দেওয়া, কসমকারীকে দায়িত্ব মুক্ত করা। [সহীহ বুখারী, ইফা: ২২৮৩]
মুমিন কোন দিকে ডাকবে ও কোন ডাকে সাড়া দিবে?
একজন মুমিন তার অপর মুমিন ভাইকে অবশ্যই কল্যাণের দিকেই ডাকবে। সুতরাং কোন মুমিনকে যখন কোন কল্যাণের দিকে আহবার করা হয় তার উচিৎ যথাসাধ্য সাড়া দেওয়া।
ولتكن منكم امة يدعون الى الخير ويامرون بالمعروف وينهون عن المنكر واولئك هم المفلحون
অর্থ: আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে আর তারাই সফলকাম। [সূরা আলে ইমরান: ১০৪]
সালাম প্রদানের পদ্ধতি :
সালাম প্রদানকারী ব্যক্তি সম্ভব হলে পূর্ণ সালাম দিবে। অর্থাৎ তিনি বলবেন- اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ
না হলে অন্তত اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ (আসসালামু আলাইকুম) বলবে। আর যিনি উত্তর দিবেন তিনিও সালাম প্রদানকারীর উত্তরে পূর্ণ উত্তর দিয়ে বলবেন- وَعَلَيْكُمْ السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ (ওয়ালাইকুম আস্সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু)। পূর্ণ উত্তর দিতে না পারলে অন্তত সালাম প্রদানকারী যতটুকু বলবে ততটুকু বলা আবশ্যক। [ সহীহ বুখারী, ইফা: ৫৭৯৪, আবু দাউদ, ইফা: ৫১০৫]
আর যদি অন্যের মাধ্যমে কেউ সালাম প্রেরণ করে তবে বলবে, وَعَلَيْهِ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ (ওয়ালাইহিস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু)। [ সহীহ বুখারী, ইফা: ২৯৯০, সূনান আত তিরমিজী, ইফা: ২৬৯৩]
আর কোন অমুসলিম ব্যক্তি কোন মুসলমানকে সালাম দিলে সে বলবে, وَعَلَيْكُمْ (ওয়ালাইকুম) [ সহীহ বুখারী, ইফা: ৫৮২২, সূনান আত তিরমিজী, ইফা: ২৭০১]
অত্র হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয় যে, সালাত যেমন মুমিনের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি করে ঠিক তেমনি ঈমানের পূর্ণতাও দান করে। তাই বলা যায় কোন মুমিন অপর মুমিনের কোন প্রকার রাগ থাকলে তা সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে নিরসন হবে।
হাঁচি দাতার করণীয়:
কোন মুমিন যখন হাঁচি দিবে তখন اَلْـحَمْدُ للهِ (আলহামদুলিল্লাহ) বলবে, অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আর শ্রোতা তার উত্তর দিয়ে বলবে يَرْحَمُكَ اللهُ (ইয়ারহামুকাল্লাহ), অর্থ: আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন। এ উত্তর শুনার পর হাঁচি দাতা বলবে يَهْدِيْكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ (ইয়াহদীকুমুল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বালাকুম) আল্লাহ আপাদের হেদায়েত করুন এবং আপনাদের অবস্থা সংশোধন করুন। [সহীহ বুখারী, ইফা: ৫৭৯১, আবু দাউদ, ইফা: ৪৯৪৯
মুমিনের জন্য কল্যাণ কামনা করা নবীদের বৈশিষ্ট:
যেমন:أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” الدِّينُ النَّصِيحَةُ ” قُلْنَا لِمَنْ قَالَ ” لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ
অর্থ: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কল্যাণ কামনাই দ্বীন। আমরা আরয করলাম, কার জন্য কল্যাণ কামনা? তিনি বললেনঃ আল্লাহর, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসুলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের। (সহীহ মুসলিম, ইফা: ১০২)
একজন মুমিন অপর মুমিনের ভাই, সুতরাং ভাই তার ভাইয়ের জন্য তার উপস্থিতি বা উপস্থিতিতে তার কল্যাণ কামনা করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ
অর্থাৎ “সকল ঈমানদাররা তো পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মাঝে আপোষ-মীমাংসা করে দাও ।” [সূরা হুজরাত ১০ আয়াত]