আল্লাহর গুণবাচক ৯৯ টি নাম ( আরবি: أسماء الله الحسنى) ” আসমাউল হুসনা ” বা ” সুন্দরতম নামসমূহ ” বলা হয়। আল্লাহর ৯৯ নাম , ইসলামে অত্যন্ত মহত্ত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আল্লাহর এই গুণবাচক নামগুলি কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ করে আছে । আল্লাহর গুণবাচক ৯৯ টি নাম মানব জাতির কাছে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের গুরুত্ব তুলে ধরে। পুরো পৃথিবীতে আল্লাহর একক ক্ষমতার ঐশ্বর্য ও মহা বিশ্বের একক শক্তির পরিচয় বর্ণনা করে। তাছাড়া কুরআন এবং হাদিসের বর্ণনা অনুসারে আল্লাহ্’র সর্বমোট নামের সংখ্যা ৯৯-এর অধিক, প্রায় ৪,০০০।
অধিকন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ কর্তৃক বর্ণিত একটা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ্ তার কিছু নাম মানবজাতির অজ্ঞাত রেখেছেন। যেখানে আল্লাহর রহমত, দয়া, মহাত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব, শক্তি ও ন্যায়ের বিচিত্র বর্ণনা উঠে আসে। আল আসমাউল হুসনা – গুনবাচক ৯৯টি এক মুসলিম অপর মুসলিমের প্রতি সদয় এবং মানবিক হতে উৎসাহিত করে। যা আমাদের ইহসান (পরিপূর্ণতা) ও তাকওয়া (আল্লাহ ভীরুতা) বৃদ্ধি করে।
একজন মুসলিম দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহর গুনবাচক নাম চর্চার মাধ্যমে নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করে। সূরা লুকমানে আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,﴿ أَلَمۡ تَرَوۡاْ أَنَّ ٱللَّهَ سَخَّرَ لَكُم مَّا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَأَسۡبَغَ عَلَيۡكُمۡ نِعَمَهُۥ ظَٰهِرَةٗ وَبَاطِنَةٗ٢٠﴾ [لقمان: ٢٠]
“তোমরা কি দেখ না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য নিয়োজিত করেছেন আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে। আর তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নি‘আমত ব্যাপক করে দিয়েছেন।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ২০]
আল্লাহর ৯৯টি নাম
১. আর রাহমান (الرحمن ) : অর্থ – পরম দয়ালু
২. আর-রাহ়ীম ( الرحيم ) : অর্থ – অতিশয়-মেহেরবান
৩. আল-মালিক ( الملك ) : অর্থ – সর্বকর্তৃত্বময়
৪. আল-কুদ্দুস (القدوس ) : অর্থ – নিষ্কলুষ, অতি পবিত্র
৫. আস-সালাম ( السلام ) : অর্থ – নিরাপত্তা-দানকারী, শান্তি-দানকারী
৬. আল-মু’মিন ( المؤمن ) : অর্থ – নিরাপত্তা ও ঈমান দানকারী
৭. আল-মুহাইমিন ( المهيمن) : অর্থ – পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণকারী
৮. আল-আ’জীজ ( العزيز ) : অর্থ – পরাক্রমশালী, অপরাজেয়
৯. আল-জাব্বার ( الجبار ) : অর্থ – দুর্নিবার
১০. আল-মুতাকাব্বিইর ( المتكبر ) : অর্থ – নিরঙ্কুশ শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী
১১. আল-খালিক্ব ( الخالق ) : অর্থ – সৃষ্টিকর্তা
১২. আল-বারী ( البارئ) : অর্থ – সঠিকভাবে সৃষ্টিকারী
১৩. আল-মুছউইর ( المصور) : অর্থ – আকৃতি-দানকারী
১৪. আল-গফ্ফার ( الغفار ) : অর্থ – পরম ক্ষমাশীল
১৫. আল-ক্বাহার ( القهار ) : অর্থ – কঠোর
১৬. আল-ওয়াহ্হাব ( الوهاب ) : অর্থ – সবকিছু দানকারী
১৭. আর-রজ্জাক্ব ( الرزاق ) : অর্থ – রিযিকদাতা
১৮. আল ফাত্তাহ ( الفتاح ) : অর্থ – বিজয়দানকারী
১৯. আল-আ’লীম ( العليم ) : অর্থ – সর্বজ্ঞ
২০. আল-ক্ববিদ্ব’ ( القابض ) : অর্থ – নিয়ন্ত্রণকারী, সরল পথ প্রদর্শনকারী
২১. আল-বাসিত ( الباسط ) : অর্থ – প্রশস্তকারী
২২. আল-খফিদ্বু ( الخافض ) : অর্থ – অবনতকারী (কাফির ও মুশরিকদের)
২৩. আর-রফীই’ ( الر افع ) : অর্থ – উন্নতকারী
২৪. আল-মুই’জ্ব ( المعز ) : অর্থ – সম্মান-দানকারী
২৫. আল-মুদ্বি’ল্লু ( المذل ) : অর্থ –(অবিশ্বাসীদের) বেইজ্জতকারী
২৬. আস্-সামি'( السميع ) : অর্থ – সর্বশ্রোতা
২৭. আল-বাছীর ( البصير ) : অর্থ – সর্ববিষয়-দর্শনকারী
২৮. আল-হা’কাম الحكم ) : অর্থ –অটল বিচারক
২৯. আল-আ’দল ( العدل ) : অর্থ – পরিপূর্ণ-ন্যায়বিচারক
৩০. আল-লাতীফ ( اللطيف ) : অর্থ – সকল- গোপন-বিষয়ে-অবগত
৩১. আল-খ’বীর ( الخبير ) : অর্থ – সকল ব্যাপারে জ্ঞাত
৩২. আল-হা’লীম ( الحليم ) : অর্থ – অত্যন্ত ধৈর্যশীল
৩৩. আল-আ’জীম ( العظيم ) : অর্থ –সর্বোচ্চ-মর্যাদাশীল
৩৪. আল-গফুর ( الغفور ): অর্থ –পরম ক্ষমাশীল
৩৫. আশ্-শাকুর ( الشكور ): অর্থ –গুনগ্রাহী
৩৬. আল-আ’লিইউ ( العلي ): অর্থ –উচ্চ-মর্যাদাশীল
৩৭. আল- কাবিইর الكبير ): অর্থ –সুমহান
৩৮. আল-হা’ফীজ ( الحفيظ ): অর্থ – সংরক্ষণকারী
৩৯. আল-মুক্বীত ( المقيت ): অর্থ – সকলের জীবনোপকরণ-দানকারী
৪০. আল-হাসীব ( الحسيب ): অর্থ – হিসাব-গ্রহণকারী
৪১. আল-জালীল ( الجليل ): অর্থ – পরম মর্যাদার অধিকারী
৪২. আল-কারীম ( الكريم ): অর্থ – সুমহান দাতা
৪৩. আর-রক্বীব ( الرقيب ): অর্থ – তত্ত্বাবধায়ক
৪৪. আল-মুজীব ( المجيب ): অর্থ – জবাব-দানকারী, কবুলকারী
৪৫. আল-ওয়াসি’ ( الواسع ): অর্থ – সর্ব-ব্যাপী, সর্বত্র-বিরাজমান
৪৬. আল-হাকীম ( الحكيم ): অর্থ –পরম-প্রজ্ঞাময়
৪৭. আর-রউফ الرؤوف ): অর্থ –পরম-স্নেহশীল
৪৮.আল-ওয়াদুদ ( الودود ): অর্থ – (বান্দাদের প্রতি) সদয়
৪৯. আল-মাজীদ ( المجيد ): অর্থ –সকল-মর্যাদার-অধিকারী
৫০. আল-বাই’ছ’ ( الباعث ): অর্থ –পুনুরুজ্জীবিতকারী
৫১. আশ্-শাহীদ ( الشهيد ): অর্থ –সর্বজ্ঞ-স্বাক্ষী
৫২. আল-হা’ক্ব ( الحق ): অর্থ –পরম সত্য
৫৩. আল-ওয়াকিল ( الوكيل ): অর্থ – পরম নির্ভরযোগ্য কর্ম-সম্পাদনকারী
৫৪. আল-ক্বউইউ ( القوي ): অর্থ – পরম-শক্তির-অধিকারী
৫৫. আল-মাতীন ( المتين ): অর্থ – সুদৃঢ়
৫৬. আল-ওয়ালিইউ ( الولي ): অর্থ – অভিভাবক ও সাহায্যকারী
৫৭. আল-হা’মীদ ( الحميد ): অর্থ – সকল প্রশংসার অধিকারী
৫৮. আল-মুহছী ( المحصي ): অর্থ – সকল সৃষ্টির ব্যপারে অবগত
৫৯. আল-মুব্দি’ ( المبدئ ): অর্থ – প্রথমবার-সৃষ্টিকর্তা
৬০. আল-মুঈ’দ ( المعيد ): অর্থ – পুনরায়-সৃষ্টিকর্তা
৬১. আল-মুহ’য়ী ( المحيي ): অর্থ – জীবন-দানকারী
৬২. আল-মুমীত ( المميت ): অর্থ – মৃত্যু-দানকারী
৬৩. আল-হাইয়্যু ( الحي ): অর্থ – চিরঞ্জীব
৬৪. আল-ক্বাইয়্যুম ( القيوم ): অর্থ – সমস্তকিছুর ধারক ও সংরক্ষণকারী
৬৫. আল-ওয়াজিদ ( الواجد ): অর্থ – অফুরন্ত ভান্ডারের অধিকারী
৬৬. আল-মাজিদ ( الماجد ): অর্থ – শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী
৬৭ . আল-ওয়াহি’দ ( الواحد ): অর্থ – এক ও অদ্বিতীয়
৬৮. আল আহাদ ( الاحد ): অর্থ – এক
৬৯. আছ্-ছমাদ ( الصمد ): অর্থ –অমুখাপেক্ষী
৭০. আল-ক্বদির ( القادر ): অর্থ – সর্বশক্তিমান
৭১. আল-মুক্ব্তাদির ( المقتدر ): অর্থ – নিরঙ্কুশ-সিদ্বান্তের-অধিকারী
৭২. আল-মুক্বদ্দিম ( المقدم): অর্থ –অগ্রসারক
৭৩. আল-মুয়াক্খির ( المؤخر ): অর্থ –অবকাশ দানকারী
৭৪. আল-আউয়াল ( الأول ): অর্থ – অনাদি
৭৫. আল-আখির ( الأخر ): অর্থ – অনন্ত, সর্বশেষ
৭৬. আজ-জ’হির ( الظاهر ): অর্থ – সম্পূর্নরূপে-প্রকাশিত
৭৭. আল-বাত্বিন ( الباطن ): অর্থ – দৃষ্টি হতে অদৃশ্য
৭৮. আল-ওয়ালি ( الوالي ): অর্থ – সমস্ত-কিছুর-অভিভাবক
৭৯. আল-মুতাআ’লি ( المتعالي ): অর্থ – সৃষ্টির গুনাবলীর উর্দ্ধে
৮০. আল-বার্ ( البر ): অর্থ – পরম-উপকারী, অণুগ্রহশীল
৮১. আত্-তাওয়াব ( التواب ): অর্থ – তাওবার তাওফিক দানকারী এবং কবুলকারী
৮২. আল-মুনতাক্বিম ( المنتقم ): অর্থ – প্রতিশোধ-গ্রহণকারী
৮৩. আল-আ’ফঊ ( العفو ): অর্থ – পরম-উদার
৮৪. মালিকুল-মুলক ( مالك الملك ): অর্থ – সমগ্র জগতের বাদশাহ্
৮৫. যুল-জালালি-ওয়াল-ইকরাম ( ذو الجلال والإكرام ): অর্থ – মহিমান্বিত ও দয়াবান সত্তা
৮৬. আল-মুক্ব্সিত ( المقسط ): অর্থ – হকদারের হক-আদায়কারী
৮৭. আল-জামিই’ ( الجامع ): অর্থ – একত্রকারী, সমবেতকারী
৮৮. আল-গণিই’ ( الغني ): অর্থ – অমুখাপেক্ষী ধনী
৮৯. আল-মুগণিই (‘المغني): অর্থ – পরম-অভাবমোচনকারী
৯০. আল-মানিই’ ( المانع ): অর্থ – অকল্যাণরোধক
৯১. আয্-যর ( الضار ): অর্থ – ক্ষতিসাধনকারী
৯২. আন্-নাফিই’ ( النافع ): অর্থ – কল্যাণকারী
৯৩. আন্-নূর ( النور ): অর্থ – পরম-আলো
৯৪. আল-হাদী ( الهادي ): অর্থ – পথ-প্রদর্শক
৯৫. আল-বাদীই’ ( البديع ): অর্থ – অতুলনীয়
৯৬. আল-বাক্বী ( الباقي ): অর্থ – চিরস্থায়ী, অবিনশ্বর
৯৭. আল-ওয়ারিস’ ( الوارث ): অর্থ – উত্তরাধিকারী
৯৮. আর-রাশীদ ( الرشيد ): অর্থ – সঠিক পথ-প্রদর্শক
৯৯. আস-সবুর ( الصبور ): অর্থ – অত্যধিক ধৈর্যধারণকারী
আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ সহ ফজিলত
আল্লাহর ৯৯ নাম এর প্রতিটি মানুষের জীবনে অনেক উপকারিতা রয়েছে। আমাদের নিয়মিত ইস্তিগফার , দুনিয়া ও আখিরাতের আল্লাহর দয়া লাভ, বিপদ বা আসুখ থেকে মুক্তি, শত্রু বা বদনজর থেকে রক্ষায় এই গুণবাচক নামের উপকারিতা অনেক । উপকারিতা নিম্নরূপ :
- ঈমান ও আত্মশুদ্ধি বৃদ্ধি: আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহের অর্থ ও তাৎপর্য জানার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে জানতে পারে। এতে মানুষ আল্লাহর প্রতি আরো নির্ভরশীল হয় এবং তার ঈমান বৃদ্ধি পায়। তার তাওবার বা নিজেকে পরিশুদ্ধ করা সহজ হয়ে যায়।
- দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভ: আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহের জিকির করলে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভ হয়। এসব নামের জিকির করলে আল্লাহর সাহায্য ও রহমত লাভ হয়।
- দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ দূরীকরণ: বিপদে পতিত হলে বা দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ বেড়ে গেলে এই গুণবাচক নামসমূহ জিকির করলে বিপদ বা দুশ্চিন্তা দূরীভূত হয়। এসব নামের জিকির করলে মন শান্ত ও প্রশান্ত হয়। আল্লাহর সাহায্য আমাদের সাহায্য করেন।
- রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভ: প্রতিনিয়ত এইসব নাম এর অর্থ জেনে জিকির করলে এই নামের উপকারিতা পাওয়া যায়। রোগ ঠেকে মুক্তি মেলে।
- শত্রু ও দুশমন থেকে রক্ষা: আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহের জিকির করলে শত্রু ও দুশমন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এসব নামের জিকির করলে আল্লাহর হেফাজত লাভ হয়।
আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহের জিকির করার কিছু পদ্ধতি:
- নিয়মিত পাঠ করা: প্রতি ফরজ নামাজের শেষে বিশেষ করে ফজর ও আসরের আল্লাহর গুনবাচক নাম জিকির করা। আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ নিয়মিত পাঠ করা উচিত। এতে আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে জানা যায় এবং আল্লাহর সাহায্য ও রহমত লাভ হয়।
- সকাল-সন্ধ্যা পাঠ করা: সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ পাঠ করা একটি সুন্নত আমল। এতে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভ হয়।
- দুরূদ শরীফের সাথে পাঠ করা: দুরূদ শরীফের সাথে আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ পাঠ করলে এর ফজিলত আরও বৃদ্ধি পায়।