Home » ঈমান ভঙ্গের কারণ

ঈমান ভঙ্গের কারণ

by inthenameofallah
ঈমান ভঙ্গের কারণ

১. আল্লাহর একাত্বতায় অন্য কাউকে শরিক করা। আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো ইবাদত করা। অন্য কাউকে সকল ক্ষমতার উৎস মনে করা। আল্লাহর সাহায্য কোনো পীর, মাজার, জীব বা জড় পদার্থ এমন কোনো কিছু বা কাউকে মাধ্যম তৈরী করে তার নিকট শাফা‘আত কামনা করে। 

২.হালাল কে হারাম ও হারাম কে হালাল মনে করা। আল-কুরআন ও হাদিসে যেসব বিষয়কে হালাল বলে উল্লেখ্য করা। সেগুলে কে হালাল মনে করা এবং হারাম বিষয়গুলোকে হালাল মনে করা। অর্থাৎ শরীয়তের বিষয়গুলোকে অমান্য করা। “ইবনে কুদামা বলেন: যে সকল বিষয় হারাম হওয়ার ব্যাপারে উম্মাহ দৃঢ়ভাবে একমত পোষণ করেছে এবং মানুষের মাঝে এর হুকম স্পষ্ট এবং শরীয়তের স্পষ্ট দলিল দ্বারা যাবতীয় সন্দেহ দূর হয়েছে। যেমন: যিনা, সুদ, শুকরের মাংশ, ধর্ম নিরপেক্ষ্য মতবাদ ইত্যাদি।”

৩. আল্লাহ মনোনীত দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। মহান আল্লাহ তা’য়ালা পৃথিবীতে মানুষের জীবন ব্যবস্থা হিসেবে যুগে যুগে আসমানি কিতাব প্রেরণ করেন নির্ধারিত রাসুলদের প্রতি। তাই কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহর প্রেরিত দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তা ঈমান ভঙ্গের কারণ হিসেবে বিবেচিত হবে। বর্তমানে বিগত ১৪০০ বছর আগে প্রেরীত মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মদ সা -এর দেখানো দ্বীন ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন অথবা ইসলামী হুকুমাত বা বিধান ছাড়া অন্য কারো তৈরী হুকুমাত উত্তম মনে করা। 

৪. মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকদেরকে সাহায্য – সহযোগিতা করা। ইসলামে ক্ষতি সাধন করার উদ্দ্যশে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অমুসলিমদের উস্কে দেওয়া বা তাদের সহায়তা করা।  “আল্লাহ তায়ালা বলেন: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

অর্থ:  হে মুমিনগন! তোমরা ইহুদী ও খ্রিষ্টানদেরকে তোমাদের বন্ধু ও অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু, (তোমাদের বন্ধু নয়)। তোমাদের মধ্যে যে তাদেরকে বন্ধ বা অভিভাবক বানাবে, সে তাদেরেই অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না। (সূরা মায়েদা: ৫১)”

৫. ভালো বা ক্ষতির উদ্দেশ্যে যাদু করা। কেউ যদি যাদুর মাধ্যমে ভালো কিছু অর্জন অথবা খারাপ কিছু বর্জন করতে চায়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক স্থাপন বা ভাঙ্গন ধরাতে গোপন, প্রকাশ্য, মন্ত্র-তন্ত্র করতে চায় বা কারো সাথে (ছেলে-মেয়ে) সম্পর্ক স্থাপন বা বন্ধুত্বে ফাঁটল ধরাতে চায় । “রাসূল (স) সাতটি ধ্বংসকারী কাজ থেকে দূরে থাকতে বলেছেন, তার ভিতরে অন্যতম হলো যাদু করা। (সহীহ মুসলিম: ১৬৩)” 

“অন্য হাদিসে রাসূল (স) বলেন, তোমরা ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বেঁচে থাকো,আর তা হলো আল্লাহর সাথে অংশীদারীত্ব স্থাপন করা এবং যাদু করা। (সহীহ বুখারী: ৫৭৬৪)”

“রাসূল (স) আরো বলেন, যে ব্যক্তি গিরা দিয়ে তাতে ফুঁক দেয়, সে যাদু করলো, আর যে যাদু করলো, সে মুশরিক হলো। আর যে গলায় কিছু ঝুলায় তাকে সেই জিনিসের উপর ন্যস্ত করা হলো। (সুনানী নাসায়ী:৪০৭৯)”

৬. নবুওয়াতের দাবী করা। নিজেকে নবী দাবী করলে ঈমান ভঙ্গের কারণ হিসবে বিবেচিত হবে। জাহেলী যুগে আলোর বর্তিকা হাতে নিয়ে অন্ধকার সরিয়ে ইসলামের ছায়া তলে পুরো পৃথিবীকে নিয়ে আসেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তার পরে আর কোনো নবী আসবেন না। তিনিই সর্বশেষ নবী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। তাই তাঁর পরে কেউ নিজেকে নবী বলে দাবী করতে তা ঈমান ভঙ্গের কারণ বলে গণ্য হবে।
“রাসূলুল্লাহ (স:) বলেন: আমি শেষ নবী আমার পরে আর কোন নবী আসবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন: مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا- অর্থ: মুহাম্মাদ স: তোমাদের পুরুষদের কারো পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষে নবী। আল্লাহ সবসময় জ্ঞাত। (আহযাব: ৪০)” 

“হাদীসে রাসূল (স:) বলেন: ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংগঠিত হবে না যথক্ষণ পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ জন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আগমন না ঘটবে। তাদের প্রত্যেকে দাবী করবে যে, সে আল্লাহর রাসূল। (বুখারী: ৩৪২৩, মুসলিম: ১৫৭)

. গায়েব জানে দাবী করা। কেউ নিজে গায়েব জানে এই দাবী করলে। কারণ মহাবিশ্বের পালনকর্তা মহান পরাক্রমশালী রাবুল আলামিন ব্যতিত আর কেউ গায়েব সম্পর্কে ধারণা রাখেন না। কারো পক্ষে তা জানা সম্ভবও না।  রাসূল স: বলেন, যে ব্যক্তি কোন জ্যোতিষী বা গনেকের নিকট যায় এবং তার কথাকে সত্যায়ণ করে তাহলে সে মুহাম্মাদ (স) এর উপর যা নাযিল হয়েছে তা অস্বীকার করেছে। ( মুসনাদে আহমাদ:২/৪২৯) অন্য হাদিসে রাসূল (স) বলেন, যে ব্যক্তি কোন গনকের কাছে আসলো এবং তাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করলো তাহলে তার চল্লিশ রাতের ইবাদত কবুল হবে না। (মুসলিম: ২২৩০) যেমন: জ্যোতির্বিদ্যা, রাশি দেখা, ভাগ্য গনণাকারী, যাদু মন্ত্র শিখা। 

. মুনাফেকি করা। এখানে উল্লেখ্য যে এই মুনাফেকী বলতে ঐসব মুনাফিককে বুঝানো হয়নি যা রাসূল স: বলেছেন:  “মুনাফিকের আলামত তিনটি – কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে এবং আমানত রাখলে খিয়ানত করে। অন্য হাদিসে বলেছেন: ঝগড়া করলে গালি দেয়।” 

বরং এর উদ্দেশ্য হলো: ঈমানের কোন একটি বিষয় নিয়ে মুনাফেকী করা। ঈমান বিষয় নিয়ে খেয়ালী করা। কখনো বলা আমি ঈমান এনেছি আবার কখনো বলা আমি ঈমান আনি নাই। 

“এদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন: وَإِذَا لَقُواْ الَّذِينَ آمَنُواْ قَالُواْ آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْاْ إِلَى شَيَاطِينِهِمْ قَالُواْ إِنَّا مَعَكْمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُونَ- অর্থ: আর যখন তারা ঈমানদারদের সাথে মিশে তখন বলে আমরা ঈমান এনেছি। আর যখন তারা শয়তানের সাথে একান্তে মিলিত হয় তখন তারা বলে আমরাতো তোমাদের সাথেই রয়েছি। আমরাতো মুসলমানদের সাথে উপহাস করি মাত্র। (সূরা বাকারা: ১৫)”

You may also like