সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। অজস্র দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারবর্গ এবং সাহাবায়ে কেরামের উপর। দ্বীনি ইলম শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করবো। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- قل هل يستوي الذين يعلمون والذين لا يعلمون انما يتذكر اولو الألباب অর্থ: আপনি বলুন, যারা জ্ঞানী এবং যারা জ্ঞানী নয় তারা কি সমান হতে পারে? জ্ঞানীরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা যুমার-৯) এখানে علم الدين সর্ম্পকে সংক্ষেপে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো এবং আল্লাহ তৌফিক দান করুক।
হাদিসে বলা হয়েছে – عن معاوية رضي الله عنه قال سمعت رسول الله صلي الله عليه وسلم يقول: من يرد الله به خيرا يفقهه في الدين অর্থ: হযরত মুআবিয়া (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসা ল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা যে ব্যক্তির কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। (বুখারি-মুসলিম)।
যারা আল্লাহর দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করেছে তাদের মর্যাদা আল্লাহ বৃদ্ধি করে দেন আল্লাহ يرفع الله الذين امنوا منكم والذين أوتوا العلم درجات والله بما تعملون خبير অর্থ: তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন, তোমরা যা কর আল্লাহ সে সর্ম্পকে পূর্ণ অবহিত। (সূরা-মুজাদালাহ-১১)।
দ্বীনি ইলম কি
علم শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো জ্ঞান, বিদ্যা, তথ্য, বিজ্ঞান ইত্যাদি আর الدين শব্দের অর্থ হলো আনুগত ও দাসত্ব, প্রতিফল, পথ, রীতি-নীতি ইত্যাদি তবে এখানে الدين শব্দের দ্বারা ধর্মকে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং علم الدین শব্দের অর্থ ধর্মীয় জ্ঞান। علم الدين পারিভাষিক সংজ্ঞা হলো যেসব علم দ্বারা মানুষ সত্য-মিথ্যা, হক-বাতিল, আলো-অন্ধকার, হালাল-হারাম, আদেশ-নিষেধ, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদি বিষয়ে জানতে কিংবা চিনতে সক্ষম হয় তাকে علم الدين বলে।
একজন মানুষ যখন দুনিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন তখন সর্বপ্রথম তাকে জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হয়। আল্লাহ তায়ালাও সর্বপ্রথম মানুষদেরকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন যেমন তিনি বলেন, اقرا باسم ربك الذي خلق অর্থ: পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। (সুরা- আলাক-১)
ইলম এর দু’ভাগে ভাগ। যথা:
১. ইলমে দ্বীন
২. ইলমে দুনিয়া
ইলমে দ্বীন ও ইলমে দুনিয়া উভয় শিক্ষাই দেওয়া হয় মাদ্রাসা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে, আর স্কুল ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে ইলমে দুনিয়া শিক্ষা দেওয়াটাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। যেহেতু মাদ্রাসা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে ইলমে দ্বীন ও ইলমে দুনিয়া উভয় জ্ঞানার্জন করতে পারি তাই আমাদের সকলের জ্ঞানার্জনের প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসাই হওয়া উচিত। হাদিসে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,كل مسلم
طلب العلم فريضة علي – দ্বীনি ইলেম শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসমানের ওপর ফরজ। (ইবনে মাজাহ) প্রবাদ আছে যে عدو عاقل خير من صديق جاهل – অর্থ: মূর্খ বন্ধুর চেয়ে জ্ঞানী শত্রু উত্তম।
কিয়ামতের পূর্বে মূর্খ লোকের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করা হবে তখন কিয়ামতের জন্য অপেক্ষা করার কথা রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। তিনি বলেন, ।১৬ صفيع الامانة فانتظر الساعة فقال كيف اضاعتها قال اذا وسد الامر الى غير اهله فانتظر الساعة অর্থ: যখন আমানতের খিয়ানত হবে তখন কিয়ামতের অপেক্ষা করবে। সে (আবু হুরায়রা (রা) জিজ্ঞাস করল, আমানতের খিয়ানত হবে কীভাবে? তিনি বললেন যখন অনুপযুক্ত(ইলমহীন) লোকের হাতে কোন দায়িত্ব অর্পিত হবে তখন তুমি কিয়ামতের অপেক্ষা করবে। (সহিহ-বুখারি)
দ্বীনি ইলম শিক্ষার গুরুত্ব
ইলমের গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, يؤتي الحكمة من يشاء من يؤت الحكمة فقد اوتي خيرا كثيرا, وما يذكر الا اولوا الالباب . অর্থ: তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমাত ও প্রজ্ঞা দান করেন এবং যাকে এ প্রজ্ঞা দান করা হয় ফলতঃ সে নিশ্চয়ই প্রচুর কল্যাণ লাভ করে বস্তুতঃ জ্ঞানবান ব্যক্তিগন ব্যতীত কেউই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না। (সূরা-বাকারা-২৬৯)।
ইলমে দ্বীনের গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন, وما كان المؤمنون لينفروا كافة فلو لا نفر من كل فرقة منهم طائفة ليتفقهوا في الدين ولينذروا قومهم اذا رجعوا اليهم لعلهم يحذرون অর্থ: আর মুমিনদের জন্য সমীচীন নয় যে তারা সকলে একসঙ্গে যুদ্ধে বের হবে। সুতরাং তাদের প্রতিটি দল থেকে কিছু লোক কেন বের হলো না যাতে তারা দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং আপন সম্প্রদায় যখন তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে, তখন তাদেরকে সতর্ক করতে পারে যাতে তারা (গুনাহ থেকে) বেঁচে থাকে। (সূরা-তাওবা-১২২)।
সহিহ বুখারিতে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, خيركم من تعلم القرآن وعلمه – অর্থ: তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যিনি কুরআন শিক্ষা করেন এবং তা শিক্ষা দেন। (সহিহ-বুখারি)। যার ইলমে দ্বীনের জ্ঞানার্জন করে তাদের মর্যাদা গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন, انما يختي الله من عباده العلماء অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারাই তাকে ভয় করে। (সূরা-ফাতির-২৮)
উপরিক্ত কুরআন এবং হাদিসের সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে ইলমে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করার গুরুত্ব অপরিসীম এবং ইলমে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করার ফজিলত অনেক বেশি এমনকি কোন ইবাদত করার পূর্বে সে ইবাদত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে ইলমে দ্বীনের জ্ঞানার্জনের মাধ্যে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি দান করুক। আমিন