Table of Contents
আমরা মুসলিম জাতি, বীরের ও লড়াইয়ের জাতি। তাইতো দার্শনিক কবি আল্লামা ইকবালের ভাষায় ‘আমরা তরবারির ছায়ায় প্রতিপালিত একজাতি’। বহু শত বছর আমরা পৃথিবী শাসন করেছি। একদিকে আমরা যেমন জালিমকে দমন করে মজলুমকে জুলুম নির্যাতনের যাঁতাকল থেকে মুক্তি দান করেছি। অন্য দিকে ইউরোপসহ গোটাবিশ্ব যখন বর্বরতা আর মূর্খতার ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল তখনও মানজাতিকে মানবতা আর সভ্যতার শিক্ষা আমরাই দান করেছি। তাই বিশ্বের অন্য সকল জাতি মুসলিম জাতিকে জয় করেছে, শ্রদ্ধা করেছে।
কিন্তু আজ অবস্থা ভিন্ন রকম। মুসলিম জাতি আজ দুর্বল ও শক্তিহীন। এখন যারা বিশ্বকে শাসন করছে তাদের কাছে আমাদের জান-মাল খুব সস্তা, ইজ্জত-আবরু আরো সস্তা। আমরা আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারিনা। কোন জাতি আমাদেরকে ভয় করেনা, আমরা সব জাতিকে ভয় করি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের রক্ত ঝরছে, ইজ্জত-আবরু নষ্ট হচ্ছে। এমন কি বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদেরকে জাতিগত ভাবে নির্মূল করা হচ্ছে এবং জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে; কিন্তু আমরা রুখে দাঁড়াতে পারছিনা, সামান্য একটু প্রতিবাদ করতেও সাহস পাইনা।
মুসলিম জাতি সোনালী দিনের অপেক্ষায়
কেন এমন হলো আমাদের অবস্থা? দৃষ্টি যাদের স্থূলতার সীমানায় আবদ্ধ তারা তো বিভিন্ন কারণ বলে থাকে এবং প্রতিকারেরও বিভিন্ন উপায় বাতলে থাকে। কিন্তু কবির ভাষায়- ‘যতই ঔষধ প্রয়োগ করি রোগ ততই বাড়ে’।
আর যারা অন্তরদর্শী তাঁরা বলেন, আমাদের ভিন্নতির কারণ এই যে, আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের চরিত্র হারিয়ে ফেলেছি। নিজেদের অতীত ইতিহাস ও আত্মপরিচয় ভুলে গিয়েছি। এ মহাসত্যকে পারস্যের সাধক কবি আল্লামা রুমি অতি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন একটি গল্পের মাধ্যমে। ‘এক বাঘিনী তার ব্যাঘ্র শাবক রেখে মারা গেলো, এক বকরী তাকে পরম যত্নে লালন পালন করলো। ফলে ব্যাঘ্র শাবক নিজেকে ছাগল ছানা ভাবতে শুরু করলো এবং ছাগল ছানাদের সাথে মাঠে চরে বড় হতে লাগলো। কিন্তু ব্যাঘ্র শাবক ছাগল ছানাদের যতই আপন ভাবে এবং তোয়াজ করে তাদের সাথে মিলে মিশে থাকতে চায়, ছাগল ছানারা
ততই তাকে জ্বালাতন করে। তবুও ব্যাঘ্র শাবক ছাগল ছানাদের সব অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করে যায়। তারপর এলো সেই দিন, যেদিন ইয়া বড় এক বাঘ দূর থেকে দেখতে পেলো ব্যাঘ্র শাবকের উপর ছাগল ছানাদের অত্যাচারের করুণ দৃশ্য। দেখে তো বনের বাঘ ক্রোধে আত্মহারা। তাই সে ছুটে এলো এক হুংকার দিয়ে। সেই হুংকারে ছাগল ছানারা যে যেদিকে পারে পালায়। ব্যাঘ্র শাবকও ভয়ে পালাতে চাইলো, কিন্তু বাঘ তাকে ধরে ফেলল খপ করে। ব্যাঘ্র শাবক প্রাণের ভয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে চেচাতে লাগল। বাঘ তখন শাবকটিকে ধরে এক কুয়ার ধারে নিয়ে গেলো এবং পানিতে তার চেহারা দেখিয়ে বললো, তুমি তোমার আত্মপরিচয় ভুলে গিয়েছ, তাই আজ তোমার এমন লাঞ্চনার জীবন। পানির আয়নায় একবার তাকিয়ে দেখো, কে তুমি? কী তোমার আসল পরিচয়?
কুশের পানিতে নিজের চেহারা দেখে ব্যায় শাবকের ভুল ভাঙলো এবং সে তার আত্মপরিচয়। খুঁজে পেলো। ব্যায় শাবক তখন বাঘের মতই হুংকার দিয়ে উঠলো। সেদিন থেকে ছাগল ছানাদের অত্যাচার তো বন্ধ হলোই, বরং দূর থেকে ব্যাঘ্র শাবক দেখা মাত্র ছাগল ছানারা প্রানের। ভয়ে ছুটে পালায়।
ইতিহাস অনুপ্রেরণার
মুসলিম জাতির অবস্থাও হয়েছে সেই ব্যাঘ্র শাবকের মতো। আমরা মুসলিম জাতি সিংহের জাতি, আমরা ব্যাঘ্র শাবক। কিন্তু আত্মবিস্মৃতির কারনে পৃথিবীর ছাগল ছানাদের হাতে আমাদের এতো বঞ্চিতি ও লাঞ্চনা। কিন্তু একবার যদি আমরা আমাদের আত্মপরিচয় কি তা বুঝতে পারি এবং ইতিহাসের আয়নায় যদি একবার নিজেদের চেহারাটা দেখতে পাই। আর বাঘের মতো হুংকার দিয়ে উঠতে পারি, তাহলে সেই ব্যাঘ্র শাবকের মতো আমাদেরও অবস্থার পরিবর্তন হবে।
পৃথিবীর ছাগল ছানাদের অত্যাচার করা তো দূরের কথা, ভয়ে দিগ্বিদিক ছুটে পালাবো। আমাদের ইতিহাস তো বদর, উহুদ, খন্দক, ইয়ারমুক ও কাদিসিয়া ইত্যাদির ইতিহাস। অমর তো আল্লাহর তরবারি খালিদের অনুসারী। স্পেন বিজেতা বীরসেনানী তারিক বিন যিয়াদের আদর্শের পতাকাবাহী। আর সতেরো বছরের কিশোর সেনাপতি মুহাম্মাদ বিন কাসিমের জিহাদী কাফেলার সৈনিক। আমাদের উত্থান তো হয়েছে মানুষকে মানুষের গোলামী থেকে বের করে এক আল্লাহর দাসত্বের দিকে বের করে আনতে। দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে পরম প্রশস্ততার দিকে ফিরিয়ে আনতে এবং অন্য সব বাতিল ধর্মের যুলুম নির্যাতন থেকে ইসলামের শান্তিপূর্ণ ইনসাফের দিকে বের করে আনতে।
আমরা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করি। যিনি বিশ্ব জগতের স্রষ্টা ও সর্ব শক্তিমান। আমর তো আল্লাহ ছাড়া কারো সামনে মাথা নত করিনা। বুকে আমাদের তাওহীদি আমানত, এভো সহজ নয় পৃথিবীর বুক থেকে আমাদের নিশ্চিহ্ন করা। জিহাদের জযবায়, শাহাদাতের তামান্নায় আমরা মৃত্যুঞ্জয়ী। আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী, আর আল্লাহও আমাদের সাহায্যকারী। আমর মুসলিম জাতি একদেহ এক প্রাণ। আমরা কেন লাঞ্চিত ও লুণ্ঠিত হবো? আমরা পৃথিবীর শাসক। না হয়ে কেন শুধু শাসিত হবো?
জেগে উঠো বীর
জাগো, উঠ এবং সেই সিন্ধু বিজেতার মতো হুংকার দিয়ে বলো- “আল্লাহ আকবর’। ইনশাআল্লাহ… আল্লাহ আমাদের হাতেই বাতিলের দুর্গ মিসমার হবে, আর ইসলামের বিজয় পতাকা দিকে দিকে আবার উড্ডিন হবে। মুসলিম জাতি তোমাদের সাহসে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। ইনশাআল্লাহ… আল্লাহ সেদিন খুব বেশী দূরে নয়া যেদিন তোমাদেরকে বধ্য দিবে এমন কোনো শক্তিই অবশিষ্ট থাকবেনা। কিন্তু বড়দের মতো যদি তোমরাও ঘুমিয়ে থাকো, কিংবা ব্যাঘ্র শাবক হয়েও ছাগল ছানার মত ভ্যাঁ ভ্যাঁ করো তাহলে স্বাধীনতার সূর্য উদয় হবে। বিলম্বিত হবে।
আমরা মুসলিম। আমাদের শক্তি ঈমানী শক্তি। আমরা আল্লাহর বলে বলিয়ান। আমরা আল্লাহর সকল বিধান পালনে সদ্য বদ্ধপরিকর। অতএব আজ আমাদের প্রত্যেকের কষ্টে করি মতিউর রহমান মল্লিকের ভাষায় ঘোষিত হোক,
মুসলিম আমি সংগ্রামী আমি আমি চির রণবীর।
আল্লাহকে ছাড়। কাউকে মানি না নারায়ে রাকীব, নারায়ে তাকবীর।